দৈনিক গণশক্তিঃ সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্মুখ সারির নেতা সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মাকসুদ খান।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে তাকে গ্রেপ্তারের পর মোটা অংকের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাতের আঁধারে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি শামিনুল হকের বিরুদ্ধে।
পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
এস এম মাকসুদ খান সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া গত কয়েক বছর তিনি সাতক্ষীরা সদরের সাবেক এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
নজরুল ইসলামের মদতপুষ্ট হয়ে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বে ছিলেন।
জানা গেছে, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে গত ৪ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় সর্বশেষ অবস্থান কর্মসূচির সম্মুখ সারিতে থেকে কঠোর অবস্থানে ছিলেন ছিলেন মাকসুদ খান। পোস্ট অফিস মোড় সংলগ্ন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে সেদিন সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সাবেক এমপি আশরাফুজ্জামান আশু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একে ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
এদিন মাসুদ খানের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক মোটরসাইকেল ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে শহরে শোডাউন দেন।
সাতক্ষীরা সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, অপারেশন ডেভিলহান্টে অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে মাকসুদ খানকে শহরের কাটিয়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে সাতক্ষীরা সদর থানা-পুলিশ।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, দুপুরে গ্রেপ্তার হওয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদ খানকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। আমি ব্যক্তিগত কাজে মঙ্গলবার দুপুর থেকে কয়েকবার থানায় গিয়েছি। থানায় গিয়ে দেখি অপারেশন ডেভিলহান্টে গ্রেপ্তার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ খানকে থানার গারদে রাখা হয়নি। তাকে ওসি অপারেশনের রুমে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরে আমি থানায় গিয়ে দেখতে পাই ওসি অপারেশনের রুমে মাকসুদ খানের সাথে গোপন মিটিং করছে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সামিনুল হক। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে মোটা অংকের রফা-দফা করে ছেড়ে দিয়েছেন অফিসার ইনচার্জ।
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির নুরুল হুদা বলেন, শুনেছি আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ খান ও ইয়ারাব হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করেছে দুইজনকে তবে একজনকে ছেড়ে দিয়েছে এমন ঘটনা আমার জানা নেই। এইসব বিষয়গুলো দেখা দরকার।
পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের সময় কোনো মামলা বা কারণ ছাড়াই আমরা গ্রেপ্তার হয়েছি। ঘরবাড়ি পরিবার ছেড়ে বাইরে পালিয়ে ছিলাম। আর এই সময়ে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তাদের গ্রেপ্তারের পরে কীভাবে ছাড়ে। এটা খুব দুঃখজনক।
সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক রহমত উল্লাহ পলাশ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ খানকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি শুনেছি। তবে তাকে আবার ছেড়ে দিয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনি পুলিশের এমন কর্মকান্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেন
সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি শামিনুল হক বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া মাকসুদ খানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা ছিল। শুনেছি উনি জামিনে রয়েছেন। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সুযোগ সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদ খানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু দুটি মামলায় সে জামিনে থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আমাকে জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে পরবর্তীতে আবারও গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।