স্টাফ রিপোর্টার(ফুলবাড়িয়া): মো. এ বি সিদ্দিক পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে। ৪৩তম বিসিএসে তিনি পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। ভাইভা বোর্ডে ছিলেন ১৫ মিনিট। এটা ছিল তাঁর তৃতীয় ভাইভা।
আমি : আসসালামু আলাইকুম, স্যার।
চেয়ারম্যান : ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
চেয়ারম্যান : আপনি তো শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত, আপনার চাকরির বয়স কত দিন হলো?
আমি : স্যার, ৪০তম বিসিএসে মহীপুর হাজী মহসীন সরকারি কলেজ, পাঁচবিবি, জয়পুরহাটে কর্মরত। চাকরির বয়স প্রায় ১০ মাস।
চেয়ারম্যান : ও তাহলে তো আপনি প্রায় এক বছর চাকরি করে ফেলেছেন।
আমি : জি, স্যার।
চেয়ারম্যান : তাহলে আপনি আপনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবং বাস্তবতার নিরিখে উত্তর দেবেন।
আমি : জি, স্যার।
চেয়ারম্যান : বর্তমানে ছেলেমেয়েদের হাতে হাতে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব—এসব তাদের হাতের নাগালে। আপনার কাছে কি মনে হয় না এসব কারণেই পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?
আমি : না, স্যার। আমার কাছে মনে হয় না এসব কারণে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হচ্ছে।
চেয়ারম্যান : কেন আপনার কাছে এমন মনে হলো?
আমি : স্যার, এই যুগে এসে আমরা প্রযুক্তি ছাড়া শুধু শিক্ষাই নয়, কোনো বিষয়কেই সামনে এগোতে পারব না।
বরং আমরা যদি ছেলেমেয়েদের হাত থেকে স্মার্টফোন কেড়ে নিই, তাহলে একসময় জাতি পেছনে পড়ে যাবে। তখন স্যার বিষয়টি আমাদের জন্য কোনোভাবেই সুখকর হবে না। তাই বর্তমান সরকার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষাকে কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে; যেমন—Flipped Classroom, Blended Classroom, Online Class ইত্যাদি।
চেয়ারম্যান : ‘সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কর্মসূচি’ বলতে কী বোঝেন?
আমি : সরকার দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করে, এর সবই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।
চেয়ারম্যান : যেমন?
আমি : বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, সর্বজনীন পেনশন স্কিম, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, কাজের বিনিময়ে টাকা, ১০ টাকা কেজি চাল ইত্যাদি, স্যার।
চেয়ারম্যান : বলেন তো সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কী?
আমি : স্যার, যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের অবসরজীবনে অর্থাৎ শেষ বয়সে এক ধরনের পেনশনের ব্যবস্থা করা হয়, যা সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনমানের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। কিন্তু যাঁরা বেসরকারি চাকরি করেন অথবা অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁরা শেষ বয়সে এখন পর্যন্ত কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থার আওতায় আসেননি। তাই বর্তমান সরকার বাংলাদেশের সর্বস্তরের সব মানুষকে শেষ জীবনে নিরাপত্তাব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে যে পেনশন ব্যবস্থা চালু করেছে, তা-ই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা।
চেয়ারম্যান : সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় কত প্রকার স্কিম আছে?
আমি : চার প্রকার, স্যার।
চেয়ারম্যান : কী কী?
আমি : স্যার, সুরক্ষা, সমতা, প্রগতি ও প্রবাস।
চেয়ারম্যান : কোন পেনশন ব্যবস্থা কোন ধরনের মানুষের জন্য, তা কি আপনার জানা আছে?
আমি : জি, স্যার। জানা আছে।
চেয়ারম্যান : তাহলে তো আপনি জানেনই আপনাকে আর জিজ্ঞাসা না করি।
আমি : স্যার।
চেয়ারম্যান : ইন্দোপ্যাসিফিক আউটলুক বলতে কী বোঝেন? সরকার চারটি আউটলুক ঘোষণা করেছে, ওই চারটি বলুন।
আমি : দুঃখিত, স্যার। আমার জানা নেই।
এক্সটার্নাল-১ : আপনার ক্যাডার চয়েসগুলো বলুন।
আমি : বিসিএস পুলিশ, বিসিএস প্রশাসন… (দুটি বলার পরই স্যার থামিয়ে দিলেন।)
এক্সটার্নাল-১ : মনে করুন, বাংলাদেশে অপরাধ করার হার শূন্যের কোঠায় নেমে গেল। কেউ আর কোনো অপরাধ করে না। তখন তো আর পুলিশের প্রয়োজন নেই, নাকি?
আমি : স্যার, তখনো পুলিশের প্রয়োজন আছে।
এক্সটার্নাল-১ : কেন? তখন পুলিশ দিয়ে আমরা কী করব?
আমি : স্যার, চাকরিপ্রার্থীরা চাকরি পাওয়ার পর যে ভেরিফিকেশন করা হয়, তা পুলিশ করে। আজকে যদি একটি আনন্যাচারাল ডেথ হয় অথবা রোড অ্যাকসিডেন্টে দুজন লোক মারা যায়, তাহলে এই লাশের ব্যবস্থা কে করবে, স্যার? তখন কিন্তু এই লাশের আত্মীয়-স্বজনকে খুঁজে পেতে অথবা বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করতে পুলিশেরই প্রয়োজন।
এক্সটার্নাল-১ : ও আচ্ছা, তাইতো। আচ্ছা, বলুন তো পুলিশে কয়টি স্তরে নিয়োগ হয়?
আমি : স্যার, চারটি স্তরে (কনস্টেবল, সাব-ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট এবং এএসপি)।
এক্সটার্নাল-২ : পোশাক খাত ছাড়া বাংলাদেশের রপ্তানি সম্ভাবনাময় আর কী কী খাত আছে?
আমি : স্যার, বাইসাইকেল।
এক্সটার্নাল-২ : কোন ব্র্যান্ড রপ্তানি করা হয়েছে?
আমি : স্যার, দুরন্ত বাইসাইকেল।
এক্সটার্নাল-২ : নারী শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে?
আমি : এই প্রশ্নের মিনিং বুঝতে আমার একটু অসুবিধা হয়। সরকার নারীদের জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং শিশুদের জন্য কী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা নিয়ে বলছিলাম। কিন্তু স্যার তখন আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, নারী শিশু বলতে আমি অবিবাহিত মেয়েদের বুঝিয়েছি। তখন আমি উপবৃত্তির কথা এবং বিনা বেতনে অধ্যয়নের কথা বলেছিলাম।
এক্সটার্নাল-২ : বাজেটের মূল ভিত্তি কী?
আমি : সরি, স্যার। আমার জানা নেই।
চেয়ারম্যান : আপনারা যখন ভাইভা দিতে বোর্ডে প্রবেশ করেন, তখন যদি আমরা ইংরেজিতে আপনাদের প্রশ্ন করা শুরু করি, তখন আপনাদের কপাল ঘেমে যায়, আপনারা বিব্রত বোধ করেন এবং ভাইভাটা অবশেষে খারাপ করে ফেলেন। কেন?
আমি : কারণ স্যার, আমরা যখন ভাইভা দিতে আসি, তখন আমাদের এক ধরনের স্ট্রেস কাজ করে। এই ভাইভার ওপর আমাদের চাকরি পাওয়া না পাওয়া অনেকটাই নির্ভর করে। ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয়, স্যার। সুতরাং যখন কোশ্চেন ইংরেজিতে শুরু হয়, তখন স্যার আমাদের স্ট্রেসের মাত্রাটা আরো একটি ধাপ বেড়ে যায়। তখনই আমাদের কপাল ঘামতে থাকে। তার মানে এই নয় স্যার, আমরা ইংরেজি পারি না!
চেয়ারম্যান : তাহলে তো আপনি ইংরেজি বলতে পারেন, তাই না?
আমি : জি, স্যার।
এক্সটার্নাল-২ : Write down 32 without using 2.
(টেবিলের ওপর খাতা-কলম রাখা ছিল, তাতে আমি লিখেছিলাম XXXII)
এক্সটার্নাল-২ : কী লিখেছেন, মুখে বলেন।
(যা লিখছিলাম, তা-ই বললাম।)
এক্সটার্নাল-২ : আপনি এত দূর চলে গেছেন, আমি তো এত দূর চিন্তাই করিনি।
আমি : স্যারের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি বলছিলাম, স্যার আপনি কি ৩১+১ চাচ্ছিলেন?
(এক্সটার্নাল স্যার কিছু বলার আগেই চেয়ারম্যান স্যার বলেন, Thank You, আপনি আপনার পেপারগুলো নিয়ে যান)।