স্টাফ রিপোর্টার(ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৪ পালিত হয়েছে। এবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রূখবো মরুময়তা অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা।
বুধবার (৫ জুন) ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের আয়োজনে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের ভাষা শহিদ আব্দুল জব্বার মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ আলী। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক দিলরুবা আহমেদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এবং নারী উদ্যোক্তা সৈয়দা সেলিমা আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মমতাজ উদ্দিন।
প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ জাতীয়প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ। মসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সময়ে খুব দ্রুত তাপমাত্রা পরিবর্তন হচ্ছে। দিনে প্রচ- গরম থাকে আবার রাত নামার সাথে সাথে প্রচন্ড শীত অনুভূত হয়। দ্রুত তাপমাত্রা পরিবর্তন হওয়ার কারণ আমরা সবাই বুঝি বা জানি। আপনারা কোন হাইরিচ বিল্ডিং এর ছাদে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকালে দেখবেন শুধু বিল্ডিং আর বিল্ডিং। গাছপালা, পানি বা জলধার দেখা যায় না।
আমরা সব জায়গা পাকা করে ফেলছি। নষ্ট করছি গ্রীন পার্ক। তাই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সমস্যা থেকে বের হওয়ার উপায় আমাদেরই বের করতে হবে। আমরা যারা শহরে বসবাস করি তারা ছাদবাগান করতে পারি। ময়লার উচ্ছৃষ্ট অংশ এখানে সেখানে না ফেলে সঠিক জায়গায় ফালানোর অভ্যাস করি। পরিবেশ নিয়ে শুধু আলোচনা করলে হবে না এ বিষয়গুলো সবাই সবার সাথে শেয়ার করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। এশহর রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
আমরা একে অন্যের দোষারোপ না করে সবাই মিলে সামগ্রিকভাবে কাজ করতে হবে। মোবাইল কোর্ট বা মামলা দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যাবে না। পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হবে সবার প্রচেষ্টায়, কারো একক প্রচেষ্টায় পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। প্রধান নির্বাহী আরো বলেন, এখন কিন্তু পলিথিনের বিকল্প বাজারে এসেছে। বিকল্প ব্যবহার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্লাস্টিক বোতল দ্রব্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৃক্ষরোপন করার পাশাপাশি তালগাছ লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব এবং পরিবেশ দিবসের বিশ্ব ইতিহাস নিয়ে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পরিবেশ অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ে পরিচালক। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণের আইন-নীতি ও কার্যক্রম নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট আকারে আলোচনা করেন। পরিচালক বলেন, ১৯৭৩ সালের সম্মেলনে ৫ জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।
এরপর ১৯৭৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দিবসটি সারা বিশ্বে পালন করা হচ্ছে। প্রতি বছরই দিবসটি সারাবিশ্বের বিভিন্ন শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়। এবারের আয়োজক দেশ সৌদিআরব। পরিচালক আরো বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হয়। ময়মনসিংহের রেলওয়ে এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় জলাধার ও ডোবা পরিষ্কার করা হয়। শহরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ময়মনসিংহ শহরসহ অন্যান্য জেলা-উপজেলায় পরিছন্নতা কার্যক্রম চলমান।
এছাড়াও যাদের কাগজপত্র সঠিক থাকে তাদেরকে আমরা খুব দ্রুত পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান করে থাকি। সকালে টাউন হল হতে জেলা পরিষদ পর্যন্ত এক বন্যার্চ র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালি ও আলোচনা শেষে অতিথিবৃন্দ কর্তৃক শিশু কিশোর চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার ও সনদ প্রদান করা হয়।
০৬ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এক লক্ষ ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপন করা হবে। এর মধ্যে ৫০ হাজার গাছ হালুয়াঘাটের গাবরাখালী পর্যটন কেন্দ্রে বৃক্ষরোপণ করা হবে।
আলোচনা সভা ও র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন সেচ্ছাসেবী সংগঠন, পরিবেশবাদী সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমন্ডলী, ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। উল্লেখ্য, এবছর বর্ষা মৌসুমে সারাদেশে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হবে।