স্টাফ রিপোর্টার(ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহে চার টুকরো করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভ (২৪) হত্যাকান্ডের আলোচিত ঘটনায় মূলহোতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও নিহতের আপন চাচা ইলিয়াস আলী (৫৫) সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) ও থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় জব্দ করা হয়েছে মৃতদেহ বহনে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার।
মঙ্গলবার (৪ জুন) ভোরে ঢাকা ও দেশের সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় ডিবি ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তারকরা হয়। গ্রেফতার হওয়া অন্যরা হলেন- ইলিয়াসের শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক (৩০) এবং মৃতদেহ বহনকারী গাড়ীর ড্রাইভার আব্দুল হান্নান আকন্দ (৬৫)। এদিন দুপুর ২টায় জেলা পুলিশের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহম্মেদ ভূঞা সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
এ সময় তিনি জানান, আসামি ইলিয়াছ আলী নিহত ওমর ফারুক সৌরভের আপন চাচা। চলতিমাসের ১২ মে প্রেমের সম্পকের সূত্রধরে ইলিয়াস আলীর মেয়ে ইসরাত জাহান ইভাকে গোপনে বিয়ে করে সৌরভ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ইলিয়াস। এর আগে বিগত ৩ বছর আগে আব্রাহাম নামে এক কানাডা প্রবাসী শিক্ষার্থীর সাথে বিয়ে হয়েছিল ইভার।
এনিয়ে ইলিয়াসের সাথে তার আপন বড় ভাই ইউসুফ আলীর সাথে বিরোধ চরম আকার ধারণ করলে সৌরভকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ইলিয়াস। এরই মাঝে গত ১৬ মে ইভাকে কানাডা পাঠিয়ে দেয় ইলিয়াস। এরপর গত ২ জুন বিকালে নিহত সৌরভ ময়মনসিংহ আসে ইভার প্রথম স্বামী আব্রাহামের এক আত্মীয়র সাথে দেখা করতে। এই খবর পেয়ে ইলিয়াসের ছেলে মৃদুল (১৭) সৌরভকে ফোন করে নগরীর গোহাইলকান্দি (প্রাইমার স্কুল সংলগ্ন) তাদের বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে সৌরভ যাওয়ার পর ইলিয়াছ বাসার নিচ তলার একটি কক্ষে নিয়ে হাত-পা বাঁধে রেখে তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুককে ফোন করে বাসায় ডেকে নিয়ে আসে।
পরবর্তীতে তারা দু’জনে মিলে সৌরভকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে লাশ বাথরুমে রাখে। এরপর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তারা নগরীর গাঙ্গীনারপাড় থেকে একটি ট্রলি ব্যাগ (লাগেজ), পলিথিন ও হ্যান্ডগ্লাভস কিনে বাসায় নিয়ে যায়। পরে তারা বাথরুমে রাখা সৌরভের মৃতদেহের শরীর হতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা এবং দুই পায়ের উরু বিচ্ছিন্ন করে পলিথিনে প্যাকেট করে লাগেজের মধ্যে রাখে।
এ সময় তারা তারা মাথাটি স্বচ্ছ স্বচ্ছ পলিথিনে মুড়িয়ে একটি শপিং ব্যাগে রেখে ২ জুন রাত সাড়ে ১২টার দিকে লাগেজ ও শপিং ব্যাগে রাখা মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে ইলিয়াছ আলী ও ফারুক একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে সদর উপজেলার মনতলা ব্রীজের উপর হতে সুতিয়া নদীতে ফেলে দেয়।
পরদিন সকালে স্থানীয়রা নদীতে মৃতদেহ দেখে থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত সৌরভের চার খন্ডের মরদেহ উদ্ধার করে। এসপি আরও জানান, নিহত সৌরভ ঢাকাস্থ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা ডাক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম হোসেন, রায়হান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো: ফারুক হোসেন, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মাঈন উদ্দিনসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।