স্টাফ রিপোর্টার(ময়মনসিংহ): যদিও এই বাড়িটিতে তার কোন বংশধর থাকেন না এখন। অন্য কয়েকজন থাকেন বাড়িটিতে। তবে বাড়ির ভবনগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। তেমন কোন স্মৃতিচিহ্ন নেই।
নেই কোন প্রকার নির্দেশনা। এমনকি উনার সম্পর্কে লিখা কোন সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই। বাড়ির ভেতরে ঝোপঝাড়, দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে, কোথাও ইট খসে পড়েছে।
পাকা ঘরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল রয়েছে, সীমানাপ্রাচীর ধ্বসে পড়েছে। আর বাড়ির সামনের টিনের ঘরটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাড়িটির অবস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানায়।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথযথ ব্যবস্থা নিলে বাড়িটিকে রক্ষণাবেক্ষন করা সম্ভব হতো! আনন্দ মোহন কলেজ কর্তৃপক্ষেরও এক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখা দরকার।
বিভিন্ন মাধ্যম হতে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে উনার সংক্ষিপ্ত জীবনী নিন্মে উল্লেখ করা হলো-
আনন্দ মোহন বসু:-
তিনিই উপমহাদেশের প্রথম রেঙ্গলার। খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। যদিও উনার কর্মজীবন গড়ে উঠে ওকালতি পেশা দিয়ে। ১৮৪৭সালে বৃটিশ শাসনামলে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা) ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি গ্রামের এই বাড়িতে তিনি জন্মেছিলেন।
আনন্দ মোহন বসু’র পিতা ছিলেন পদ্মলোচন বসু এবং মাতার নাম উমা কিশোরী দেবী। তার পিতা ময়মনসিংহ জজ আদালতে পেশকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পিতার কর্মস্থলের সুবাদে তার শিক্ষাজীবন ময়মনসিংহেই শুরু হয়েছিল। তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল হতেই মেধা তালিকায় ৯ম স্থান সহকারে এনট্রান্স পাশ করেছিলেন ১৮৬২সালে।
শীর্ষস্থান অর্জন করে তিনি বিএ এবং এফএ পাশ করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ হতে। ১৮৭০ সালে আনন্দ মোহন বসু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ভালো ফল করায় প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করে ১০ হাজার টাকা সম্মানী পেয়েছিলেন।
১৮৭১ সালে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য।ক্যামব্রীজের ক্রাইস্টার্চ কলেজ হতে গণিত বিষয়ে সম্মান পাশ করেন।
সেখানে ট্রাইপাস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী ডিগ্রী অর্জনের মাধ্যমে উপমহাদেশের প্রথম রেঙ্গলার উপাধিতে ভূষিত হন।
একই সাথে ১৮৭৪ সালে আনন্দ মোহন বসু ব্যারিস্টার ডিগ্রীও সম্পন্ন করেছিলেন। এরপর তিনি ভারতে ফিরে আসেন।
ওকালতির পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতেও বেশ সক্রিয় ছিলেন। জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন। ভূস্বামী পরিবারে বেড়ে ওঠলেও ছাত্র থাকার সময়েই রক্ষণশীল পরিবারের গন্ডি কাটিয়ে সস্ত্রীক ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষা নেন।
উল্লেখ্য, ১৮৬৯ সালে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ডঃ জগদীশ চন্দ্র বসুর ভগ্নী স্বর্ণপ্রভার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সূত্র ধরে বঙ্গদেশে তখন মামলা মোকাদ্দমা বেশি থাকায় আইন পেশাজীবিদের আয় রোজগার বেশি হতো ।
উকিলরা দ্রুত ধনীও হয়ে যেতো। তাই তো রেঙ্গলার হয়েও আইন পেশায় নিজেকে যুক্ত করেন আনন্দ মোহন বসু।
অনেকেই এই পেশাকেই তখন সুবিধে মনে করতো । আবার জনগণের উপকারও হতো ।
তিনি সংস্কারবাদী ছিলেন বলে সমাজের মানুষের উপকারে নেমেছিলেন।
বাল্যবিবাহ বন্ধ ও কুসংস্কার প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন এবং কয়েকটি সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডমূলক সংগঠন তৈরী করেছিলেন।
১৮৮৩ সালে শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন।
এরই ধারাবাহিকতায় তিনি চালু করেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুল।
উল্লেখ্য এই স্কুলেই আনন্দ মোহন কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস চালু হয়েছিল।
পরবর্তীতে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এদেশের প্রথম মুসলিম গ্রাজুয়েট মৌলভি হামিদউদ্দীন সাহেব কর্তৃক দানকৃত জমিতে ১৯০৮ সালে বর্তমান স্থায়ী ক্যাম্পাসে কলেজ কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয়েছিল, যেটি আজও সৌগরবে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে জ্ঞানের আলো বিতরন করে যাচ্ছে।
আনন্দ মোহন কলেজ প্রতিষ্ঠার আগে ১৮৮৪, ১৮৯০, ১৮৯৫ এই বছরগুলোতে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৮৯৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর মাদ্রাজে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের যে অধিবেশন হয়েছিল তার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন এই আনন্দ মোহন বসু।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেছিলেন শক্তভাবে।
১৯০৫ সালে তিনি শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ীতে পাঠানো হয়েছিল আনন্দ মোহন বসুকে।
পরে এই গুণী শিক্ষাবিদ ২০আগষ্ট ১৯০৬ সালে কলকাতায় ইহলোক ত্যাগ করেন। তিনি কোন বংশধর রেখে যান নি।সংগৃহীত