ডা. মোহাম্মদ আবু সাঈদ সরকার (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার চড়াকান্দা গ্রামের মো. আমজাদ আলীর একমাত্র পুত্র সবুজ মিয়া (৩০) একজন জীবন যোদ্ধা। তিনি ২০১০ সালে তারাকান্দা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির পড়াশোনা বাদ দিয়ে ঢাকায় টেক্সটাইলে চাকুরি জীবন শুরু করেন।
বেশ ভালোভাবেই সুস্থ, সুন্দর, সুখী জীবন যাপন করছিলেন তিনি।
২০১২ সালে অল্প বয়সে তিনি বিয়ে করেন নিজের পছন্দের মানুষকে। দীর্ঘদিনের পরিচয়, ভালবাসা থেকে উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাদের এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। তাদের ঘর আলোকিত করে একটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে বিয়ের পরের বছর।
সুন্দর, সুখী জীবন ভালোই চলছিল। ২০১৭ সালের দিকে হঠাৎ ঢাকা থেকে বাড়ি এসে নিজের গাছ থেকে নারকেল পাড়তে তিনি নারকেল গাছে উঠেন। কিন্তু নারকেল আর খাওয়া হয় না তার, বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। তৎক্ষণাৎ তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। অপারেশন আর চিকিৎসার উসিলায় তিনি বেঁচে থাকার আশা পান। কিন্তু জীবন সঙ্গী! তার ভালোবাসার মানুষ তার এই পঙ্গুত্ব মেনে নেয় নি। তিনি সবুজ মিয়াকে ডিভোর্স দেন। তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে পুত্র সন্তানকেও সাথে নিয়ে যান। কিছুদিন পর ঐ মহিলা অন্যত্র বিয়ে করেন।
সবুজ মিয়া ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন। বর্তমানে তার মেরুদণ্ডে স্প্রিং লাগানো আছে। একা চলাফেরার সুবিধার জন্য এই বাহনটি ব্যবহার করেন। আয়ের পথ হিসেবে তিনি তারাকান্দায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। মানুষেরা কাছ থেকে ভিক্ষা, সাহায্য নিতে চান না তিনি, তিনি চান নিজে পরিশ্রম করে রোজগার করতে।
ভালোবাসার মানুষের এহেন আচরণ, শারীরিক এ দুর্ঘটনা, অর্থনৈতিক চাপ কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারে নি।
বর্তমান সময়ের হতাশাগ্রস্থ মানুষ, বেকার যুবকদের উচিত তারাকান্দার সবুজ মিয়ার জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া।